“Study in pharmacy and fly to America’’ – এমনই একরকম স্লোগান চালু হয়ে যায় ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসী বিভাগ প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে। সময়ের পরিক্রমায় এটি এখন ৩ টি বিভাগ নিয়ে গঠিত ফার্মেসী অনুষদ। প্রথম দিককার বেশীরভাগ ফার্মাসিস্টরাই পাড়ি জমান আমেরিকায় ও মধ্যপ্রাচ্যে। আবার কেউ কেউ কানাডা, ইউকে বা অস্ট্রেলিয়ায়। বাকিরা যারা দেশে আছেন তাদের হাত ধরেই সামনের দিকে এগুতে থাকে আমাদের ওষুধ শিল্প।
পরবর্তীতে ফার্মেসী বিষয়টি খোলা হয় জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে বাংলাদেশের ওষুধের চাহিদার ৯৭ ভাগই বাংলাদেশে তৈরি হয় আর রপ্তানি করা হয় বিশ্বের প্রায় ৮৭ টি দেশে। আগামী ১০ বছরে মধ্যে ওষুধ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য বা পথ্য।
বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের এই উৎকর্ষ যাদের হাত ধরে সাধিত হয়েছে তারা হচ্ছেন ফার্মাসিস্টরা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ফার্মেসী পড়ানো হয় ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, খুলনা, জগন্নাথ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (আরও ২/১ টা থাকতে পারে!)
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এশিয়া প্যাসিফিক, স্টেট, ইস্ট ওয়েস্ট, নর্থ সাউথ, সাউথ ইস্ট, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাকসহ আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে।
কি পড়ানো হয় ফার্মেসীতে?
ফার্মেসীতে যা পড়ানো হয় তার মধ্যে রয়েছে:
রসায়ন(inorganic/organic/physical/Analytical/Medicinal chemistry),
মানবদেহ (Physiology/Anatomy), ওষুধবিদ্যা(Pharmacognosy / Pharmacology / Pharmaceutical technology / Quality control / Pharmaceutical Engg / Biopharmaceutics)
লাইফ সাইন্স এর অন্যান্য বিষয় (Microbiology / Biochemistry / Biotechnology) ও Hospital pharmacy / Clinical pharmacy, Statistics সহ আরও কিছু বিষয়।
এত বিষয় দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তবে এসব বিষয় পড়তে হলে জীববিজ্ঞান (মানবদেহ) ও রসায়নে ভাল হতে হবে।
ফার্মেসী পড়ে চাকরির সূযোগ কেমন?
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট করে খুব একটা কেউ বেকার থাকে না। সেই সাথে ফার্মেসি ব্যবসার সাথে অন্য ব্যবসা ও করা যায়। তবে ফার্মা ফিল্ডে চাকরী বেশ saturated হয়ে যাচ্ছে। দেশের অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসী পড়ানো হয়, তাই অনেকেই শিক্ষকতা পেশাকে বেছে নেয়।
মোটামুটি ভাল রেজাল্ট নিয়ে ভাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বের হতে পারলে শিক্ষকতায় ঢোকা ব্যাপার না। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্রছাত্রী ফার্মা ফিল্ডে কাজ করছেন। তবে অনেক বেশী ছাত্র যেহেতু বের হচ্ছে তাই ভাল/প্রথম দিকের কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসীতে চান্স না পেলে ফার্মেসী পড়ার আগে একবার চিন্তা করে দেখা উচিত।
কর্মক্ষেত্রের বিস্তার:
- ফার্মা কোম্পানি: ওষুধ উৎপাদন, গবেষণা, মার্কেটিং ইত্যাদি বিভাগে কাজ করার সুযোগ।
- হাসপাতাল: রোগীদের ওষুধ প্রদান, ওষুধ সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়া, ওষুধ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি।
- কমিউনিটি ফার্মেসি: সাধারণ মানুষকে ওষুধ সরবরাহ করা এবং ওষুধ সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া।
- বিশ্ববিদ্যালয়: শিক্ষকতা, গবেষণা।
- নিয়ন্ত্রক সংস্থা: ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ, নতুন ওষুধ অনুমোদন ইত্যাদি।
- স্টার্টআপ: নিজস্ব ফার্মা কোম্পানি বা হেলথ টেক কোম্পানি গড়ে তোলা।
ফার্মেসী পড়ে দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ কেমন?
একসময় প্রচুর ফার্মাসিস্ট বাইরে যেতেন। ২০০৩ সালের পর আমেরিকায় ৪ বছরের অনার্স ডিগ্রীধারীদের ফার্মাসিস্ট নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে দিচ্ছে না। অর্থাৎ কেউ যদি আমেরিকায় ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ করতে চান তার ৫ বছরের অনার্স লাগবে বা ফার্ম ডি লাগবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০-১১ সেশন থেকে ৫ বছরের অনার্স চালু হয়েছে। এখানে একটা ব্যাপার ক্লিয়ার করা উচিত। আমাদের দেশে বেশিরভাগ ফার্মাসিস্ট যেমন ওষুধ কোম্পানিতে কাজ করেন তেমনি বাইরের দেশে বেশিরভাগ ফার্মাসিস্ট কমিউনিটি, রিটেইল, ক্লিনিক বা হসপিটাল ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ করেন আর তার জন্য লাইসেন্সধারী ফার্মাসিস্ট হতে হয়। আর ৪ বছরের অনার্স নিয়ে আমেরিকা ছাড়া অন্য যে কোন দেশে গিয়ে নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করে ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ করতে পারবেন।
তবে আপনি পিএইচডি করতে চাইলে আমেরিকা যেতে পারেন। আমেরিকায় ফার্মেসী পড়ায় এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অন্যান্য বিষয়গুলোর তুলনায় কম হলেও প্রচুর ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষার্থে (মাস্টার্স/পিএইচডি) করতে আমেরিকা, ইউকে সহ অন্যান্য দেশে যাচ্ছেন।অনেকেই বিসিএস দিয়ে আবার সরকারী চাকরীতেও যাচ্ছেন।
পাঠকদের জন্য কিছু পরামর্শ:
- আগ্রহী হওয়া জরুরি: ফার্মেসি পড়ার আগে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, আপনি কি সত্যিই ওষুধ এবং মানবদেহ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী?
- শক্ত পরিশ্রম: ফার্মেসি একটি কঠিন বিষয়। সফল হতে হলে শক্ত পরিশ্রম করতে হবে।
- নেটওয়ার্কিং: অন্যান্য ফার্মাসিস্টদের সাথে যোগাযোগ রাখুন। এটি আপনাকে ভবিষ্যতে কাজ পেতে সাহায্য করবে।
- আপডেট থাকুন: ফার্মাসি একটি দ্রুত পরিবর্তনশীল ক্ষেত্র। তাই সর্বদা নতুন তথ্য এবং প্রযুক্তির সাথে আপডেট থাকুন।
কেউ হয়ত খেয়াল করে থাকতে পারেন এবার ৩৩ তম বিসিএস এ সারা বাংলাদেশে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন একজন ফার্মেসী গ্র্যাজুয়েট!ফার্মেসী পড়ার একটা সুবিধা হল এ বিষয়ে পড়ে আপনি উচ্চশিক্ষার্থে লাইফ সাইন্স এর যেকোনো দিকে সুইচ করতে পারবেন। তাই আমার মতে যারা লাইফ সাইন্স পড়তে চান তাদের ফার্মেসী প্রথম চয়েজ হওয়া উচিত। ওষুধবিজ্ঞান উপভোগ করতে পারলে ভাল লাগবে অন্যথায় হতাশ হতে হবে। তবে পড়লে ভাল করে পড়তে হবে।
Leave a Reply